প্রাচীন পুরাণঃ উর্বশী ও পুরুরবার প্রেম কাহিনী

অপ্সরা উর্বশী ও পুরুরবা এর বিদায়ের দৃশ্য

উর্বশী অপরূপ রূপলাবণ্যময়ী স্বর্গের অপ্সরী। উর্বশীর কি ভাবে জন্ম হয়েছে তা নিয়ে নানা ধরনের মত প্রচলিত আছে। কারো কারো মতে উবর্শী নারায়ণের উরু ভেদ করে জন্মগ্রহণ করেন তাই তার নাম উর্বশী। আবার একথাও বলা হয় সমুদ্র হতে উর্বশীর জন্ম। এটাও প্রচলিত যে উর্বশী সাতজন মনুর সৃষ্টি।

একদিন ইন্দ্রের নৃত্যসভায় রাজা পুরুবা আমন্ত্রিত হন। নৃত্যের জন্য উবর্শীকে অনুরোধ করলে তিনি নৃত্য শুরু করেন। কিন্তু উর্বশী রাজা পরুরবার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে দৃষ্টি দিলে উর্বশীর নৃত্যের ছন্দ ভঙ্গ হয়। ফলে ইন্দ্র উর্বশীকে অভিশাপ দেন। এবং তাকে পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ হিসেবে বসবাস করতে হবে।

উর্বশী এই অভিশাপ শোনার পরে দেবতা ইন্দ্রের কাজে একটি আর্জি করেন। উবর্শী মত্যলোকে পুরুরবার স্ত্রী হিসেবে থাকতে চান। দেবতা ইন্দ্র তার এই মনোবাসনা পুরুণ করেন কিন্তু এখানে ইন্দ্র কয়েকটি শর্ত দিয়ে দেন। শর্তগুলো অনেকটা এই রকম যে- দিনে তিনবার পুরুরবা উর্বশীকে আলিঙ্গন করতে পারবে। উর্বশীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে পুরুরবা কখনো উর্বশীর সাথে মিলিত হতে পারবেন না এবং উর্বশী কখনো পুরুরবাকে নগ্ন অবস্থায় দেখতে পারবে না।

উর্বশী এই শর্তগুলো মেনে নিয়ে মত্যলোকে পুরুরবার স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে রাজী হলেন। এই ভাবে পুরুরবার স্ত্রী হিসেবে উবর্শী বহু বছর পার করে দেন। বহু বছর গত হবার পর স্বর্গের সভাসদগন স্বর্গে উর্বশীর অভাব অনুভব করলেন। এখন কি ভাবে তাকে ফিরিয়ে আনা যায় সেই পথ খোজতে থাকেন। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে তারা একটি বুদ্ধি বের করলেন।

তো স্বর্গের সভাসদরা উর্বশীর শয়ন কক্ষে দুইটি মেষশাবক বেধে দিয়ে যান স্বর্গের উপহার হিসেবে। এই মেষশাবক দুইটি সবসময়ই উবর্শীর শয়ন কক্ষেই থাকত। তো একদিন রাতে এই দুইটি মেষশাবকের মধ্যে একটি চুরি করে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন স্বর্গের সভাসদরা। মেষশাবক চুরি করার সময় উর্বশী টের পেয়ে যান। উর্বশী রাজাকে অনুরোধ করেন চোর ধরে আনার জন্য। রাজা উর্বশীর কথায় হন্তদন্ত হয়ে নিদ্রা থেকে উঠে পরেন। এই সময় রাজা উলঙ্গ অবস্থায় ছিলেন। রাত ছিল বিধায় রাজার উলঙ্গ অবস্থা উর্বশী দেখতে পাচ্ছিলেন না। এই সময় স্বর্গের সভাসদরা এটা বুঝতে পেরে দ্রুত বজ্রের সাহায্যে বিদ্যুতের সৃষ্টি করলেন এবং তার আলোয় ঘর ভরে উঠল। এই সময় উর্বশী রাজার নগ্ন অবস্থা দেখে ফেলে। ফলে উর্বশী তার শাপ মুক্ত হয়ে সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে যান।

উর্বশীকে হারানোর শোকে রাজা পুরুরবা দেশে দেশে ঘুরেবেড়াতে লাগলেন। ধীরে ধীরে উর্বশীকে পুনরায় পাবার আশা ক্ষীণ হতে লাগল। কিন্তু একদিন কুরুক্ষেত্রের নিকটে আরো চারজন অপ্সরীর সাথে উর্বশীকে দেখে পেলেন স্নানরত অবস্থায়। রাজা উর্বশীকে বার বার অনুরোধ করতে লাগলেন ফিরে আসার জন্য। কিন্তু উর্বশী কোন ভাবেই রাজী হচ্ছিল না। এই ভাবে বেশ কয়েক দিন যাওয়ার পর একদিন উর্বশী বলেন- বছরের শেষ রাতে আসলে আমি তোমার সাথে শয্যা গ্রহণ করব। এর ফলে আমাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম হবে। তো রাজা পুরুরবা বছরের শেষ রাত্রিতে এসে উর্বশীর সাথে শয্যা গ্রহণ করলেন এবং তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করল। এভাবে প্রতিবছরের শেষ দিন উর্বশী ও পুরুবার মিলন হতে থাকল এবং প্রতিবছর একটি করে পুত্র সন্তান জন্ম নিতে থাকল। বলা হয় যে উর্বশী ও পুরুবারা পুত্র সন্তানের সংখ্যা পাচ জন।
একদিন উর্বশী এসে পুরুবারকে বললেন যে- দেবতা তোমার মনের ইচ্ছে পুরুণ করবে, তবে একটা শর্ত আছে। পুরুরবা শর্ত শুনতে চাইলেন। উর্বশী বলল- স্থায়ী ভাবে মত্যলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে এসে সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করতে হবে। এই জন্য তাকে একবার মৃত্যুকে গ্রহণ করতে হবে। পুরুরবা এই শর্তে রাজী হয়ে গেলেন। এরপর থেকে উর্বশী ও পুরুরবা এক সাথে আবার বসবাস শুরু করলেন।