আরও একবার সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতাকেই বেছে নিলো ভারতের মানুষ, আরও একবার জাতীয় নির্বাচনে গেরুয়া ঝড় উঠলো জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক এই দেশটাতে। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি, আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি- এতক্ষণে এটা বাসী খবর হয়ে গেছে। নোটবন্দি, জিএসটি, দুর্নীতি বা কৃষকের আহাজারি- কোনকিছুই টলাতে পারেনি বিজেপির আসন সংখ্যা, ২০১৪ নির্বাচনের তুলনায় সেটা বরং অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে!
অবশ্য, বুথফেরত সমীক্ষাগুলোতেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল, আবারও ক্ষমতার মসনদে বসতে চলেছেন মোদি। তবে সেটা যে এমন বিপুল তাণ্ডবে, এমনটা ভাবা যায়নি। বিজেপির নেতাদেরও বোধহয় ধারণা ছিল না, তাদের ধর্মান্ধতার গৎবাঁধা বুলি এভাবে গপাগপ গিলে খাবে জনতা! পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের ধরা হয় ভারতের সবচেয়ে বিচক্ষণ এবং রাজনীতিসচেতন ভোটার হিসেবে, তারাই যখন বিজেপির পালে হাওয়া তুলে দেয়, তখন বোঝা যায়, ‘গোরক্ষা আন্দোলন’ বা ‘অবৈধ বাংলাদেশী হঠাও’ টাইপের বিজেপির কমেডি সার্কাস শো-গুলো’র টিআরপি রেট কতটা হাই!
তবে, জনগণকে একা দোষ দিয়েও লাভ নেই। বিরোধীপক্ষ তো এটাই ঠিক করতে পারলো না যে, মোদির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী হবেন টা কে! জোট-মহাজোট কোথাও হলো, কোথাও আবার হলো না- তাতে ফলবদল হয়েছে উনিশ-বিশই। বরং পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের চেয়েও আসন বেড়েছে বিজেপির, একাই তিনশোর বেশি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তারা!
উত্তরপ্রদেশকে ধরা হয় ভারতের ক্ষমতার চাবিকাঠি, সবচেয়ে বেশি আশিটি সংসদীয় আসন আছে এই কেন্দ্রে। হাইভোল্টেজ সব প্রার্থীরাও এখান থেকেই নির্বাচন করেন। নরেন্দ্র মোদির আসন বেনারস বা গান্ধী পরিবারের নির্ধারিত আসন আমেথিও এখানেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নিজের হোমগ্রাউন্ড আমেথিতে বিজেপি স্মৃতি ইরানীর কাছে হেরেছেন রাহুল গান্ধী! প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রচারণায় নামিয়েও লাভ হয়নি কোন। কংগ্রেসের দুরবস্থা বোঝানোর জন্যে এটুকুই যথেষ্ট।
মাত্র কয়েক মাস আগে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে (প্রাদেশীক নির্বাচন) জয় পেয়েছিল কংগ্রেস, সবাই ধারণা করেছিল, খেলা বুঝি জমে উঠলো! বিজেপির জনপ্রিয়তা কমছিল তখন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে মোদির পাকিস্তান জুজু আর পাকিস্তানের সীমানায় ভারতীয় এয়ারফোর্সের ভৌতিক অভিযানের মূলোটা যে খাওয়ানো গেছে, সেটা এখন পরিস্কার।
তাছাড়া প্রাদেশীক আর কেন্দ্রীয় নির্বাচন পুরোপুরি আলাদা জিনিস। একইদিনে ভোট দিতে গিয়ে একই ভোটার প্রাদেশীক নির্বাচনে এক দলকে ভোট দিয়েছেন, আর কেন্দ্রীয় নির্বাচনে অন্য দলকে- এরকম নজির ভুরি ভুরি আছে। রাজস্থানের পঁচিশটা আসনের সবগুলোতেই জিতেছে বিজেপি, ছত্তিশগড়ে এগারোটার মধ্যে দশটাই তাদের ঘরে, মধ্যপ্রদেশেও সমীকরণটা একই। বোঝাই যাচ্ছে, কেন্দ্রে কংগ্রেসের ওপরে বিন্দুমাত্র ভরসা করতে পারেনি এখানকার ভোটারেরা। আর বিজেপির ভোটবাক্স হিসেবে পরিচিত গুজরাটের ছাব্বিশটা আসনের সবকয়টাতেও জিতেছে বিজেপির প্রার্থীরাই।
উত্তরপ্রদেশে বহু বছরের তিক্ততা ভুলে বুয়া-বাবুয়া (ফুপু-ভাতিজা) একসঙ্গে জোট গড়েছিলেন, কিন্ত অখিলেশ-মায়াবতীর সেই জোট হালে পানি পায়নি, সেখানকার ভোটারেরা রামমন্দিরকেই বেছে নিয়েছেন অপশন হিসেবে, গতবারের চেয়ে সেখানে বিজেপির আসন কিছু কমলেও, সেটা পঞ্চাশের নীচে থাকছে না নিশ্চিত।
এতো অভিযোগ থাকার পরেও ভারতের জনগন আবরো মোদীর দল বিজেপিকে ২য় বারের মতো ক্ষমতায় নিয়ে এলো
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব অতি, হিন্দুত্ববাদী মোদীই আসছে দেশটির ক্ষমতায়। অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে একটা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। জরিপের ফল বিগত নির্বাচনগুলোতে যে ব্যর্থ হয়েছে তাতে এই ফলকেও অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি প্রথমে, যদিও সেসব শঙ্কা এখন কেটে গেছে, জরিপের অনুমান ছাড়িয়েও মোদীর দাপট অনেক উঁচুতে এখন। তবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মোদী ফের ভারতের প্রধানমন্ত্রী ।