এইচ এম জোবায়ের হোসাইন:: হাফিজুর রহমানের বয়স ৬০’র কাছা কাছি, এক মেয়ে, তিন ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চলছিল ধুকে ধুকে। ইটের ভাটায় কাজ করে চলছিল জীবন সংসার। এরই মাঝে বড় হয়ে উঠে সংসারের বড় ও একমাত্র মেয়ে হাজেরা আক্তার ওরফে হাফিজা। বছর ২ আগে পরিবারের একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয় ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের বাঘপাড়া এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে তোফায়েল আহাম্মেদ ওরফে সুরুজ’র সাথে।
বিয়ের কয়েক দিন পরই হাজেরা আক্তার ওরফে হাফিজার জীবনে নেমে আসে এক লোমহর্ষক অধ্যায়। যৌতুকের জন্য শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন, প্রতিনিয়তই হতো শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচার। সংসার টিকিয়ে রাখতে হতদরিদ্র পিতা দেনা ও জমি বন্ধক দিয়ে যৌতুকের দাবীকৃত ৫ লক্ষ টাকার ২ লক্ষ দিলেও পরিশোধ করতে পারেনি আরো ৩লক্ষ টাকা। এরই প্রেক্ষিতে দাবীকৃত টাকা না পেয়ে মঙ্গলবার জীবন দিতে হলো হাফিজাকে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন হাফিজার পিতা হাবিবুর রহমান।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের বাঘপাড়া এলাকায়।
নিহতের পরিবার ও অভিযোগ সূত্র জানায়, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের দবরদস্তা গ্রামের হতদরিদ্র হাবিবুর রহমানের একমাত্র মেয়ে হাজেরা আক্তার ওরফে হাফিজা (৩০) কে প্রায় ২ বছর আগে বিয়ে দেয় ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের বাঘপাড়া গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে তোফায়েল আহাম্মেদ ওরফে সুরুজ (৩২)’র সাথে। বিয়ের পর থেকেই সুরুজ যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। হাফিজা যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তার কাপালে নেমে আসতো শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। সুরুজ চাকুরীর কথা বলে পরবর্তিতে টাকার জন্য আবারো চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে হাফিজার পিতা হাবিবুর রহমান দেনা ও জমি বন্ধক দিয়ে চাকুরীর জন্য ২লক্ষ টাকা দেয় জামাতা সুরুজকে। দাবীকৃত টাকা না পাওয়ার কয়েক দিন পর থেকে আবার শুরু হয় অত্যাচার। বুধবার ভোর রাতে পরিবারের যোগসাজসে সুরুজ মিয়া নিজ ঘরে স্ত্রী হাফিজাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন হাফিজার পিতা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে সুরুজ আমাকে জানায় যে আমার মেয়ে বিষ পান করেছে, তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি হাফিজার নিথর দেহ পড়ে আছে মর্গে।
হাফিজার ভাই দেলোয়ার হোসেন জানান, যৌতুকের দাবীকৃত পুরো টাকা পরিশোধ না করায় আমার বোনকে শ্বাসরোধ করে করে লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এর দায় এড়াতে বিষ পান করে আতœহত্যা করেছে বলে এলাকায় রটনা করেছে। এ ঘটনার পর থেকে সুরুজ মিয়া ও তার পরিবারের সকল সদস্য বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছে।
মঙ্গলবার হাফিজার ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পিত্রালয়ে। বুধবার সকাল ১০টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হলেও তাঁর শশুরালয়ের কেউ অংশ নেয়নি জানাযা বা দাফনে।
ত্রিশাল থানার ওসি (তদন্ত) ফায়েজুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়েছি তবে তাদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি তবে নিহতের পিতা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।