প্রতি বছর আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই দেশের বাইরে পড়তে যেতে চান। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই যথার্থ সুযোগ সম্বন্ধে জানতে পারেন না বলে যেতে পারছেনা। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কোরিয়ার বিভিন্ন মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের এক চমৎকার ব্যাবস্থা রয়েছে। স্নাতকোত্তর বৃত্তির তুলনায় সারা বিশ্বেই স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তির সংখ্যা কম। কিন্তু কোরিয়ায় চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রচুর স্নাতক বৃত্তি আছে। কোরিয়ান সরকার কর্তৃক পরিচালিত কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (কেজিএসপি)-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শো দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই বৃত্তির অধীনে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
কোরিয়ায় গড়ে প্রতি হাজারে একজন পিএইচডি গবেষক রয়েছে বলে জানা যায়। এদের জিডিপির 4.5% এরা গবেষণার কাজে ব্যয় করে থাকে। কোরিয়াতে যত R&D আছে তত R&D অন্য কোন দেশে আছে কিনা সন্দেহ আছে। কেউ যদি ভালো কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চায় তাহলে কোরিয়া বেস্ট। সাউথ কোরিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়া এখন আগের থেকে সহজ করা হয়েছে। IELTS এ 6.5 হলেই এখানকার স্নাতকোত্তর স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়। আর স্নাতকের জন্য সর্বনিন্ম 6.5 লাগবে।
কেজিএসপি হলো স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কোরিয়ান সরকার দ্বারা প্রদত্ত একটি পাঁচ বছর মেয়াদী বৃত্তি। সম্প্রতি কেজিএসপিকে জিকেএস (গ্লোবাল কোরিয়ান স্কলারশিপ) নামে পরিচালন করা হচ্ছে। এই বৃত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে প্রথম বছর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ ইন্সটিটিউটে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে এবং এর পরবর্তী চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
বৃত্তির জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায়। একটি হলো দূতাবাস বরাবর আবেদন। এখানে আবেদনপত্র এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দূতাবাস বরাবর পাঠাতে হয়। অপরটি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদন। এখানে শিক্ষার্থী তার পছন্দমত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি আবেদনপত্র এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঠিয়ে থাকে।
আবেদনের যোগ্যতা:
আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
বয়স অনূর্ধ্ব ২৫ হতে হবে;
অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে হবে;
উচ্চ মাধ্যমিকে শতকরা ৮০ ভাগ নম্বর প্রাপ্ত হতে হবে;
যদি র্যাংকিং পদ্ধতি চালু থাকে তবে অবশ্যই আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ক্লাসে শীর্ষ স্থানীয় হতে হবে;
কোরিয়ান কিংবা ইংরেজিতে পারদর্শী প্রার্থীগণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মিনিমাম IELTS এ 5.5 থাকতেই হবে। এর নিচে হলে আবেদন করা যাবেনা।
কেজিএসপি’র জন্য দুই ভাবে আবেদন করা যায়। ১। বাংলাদেশে অবস্থিত সাউথ কোরিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে। ২। সরাসরি কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত হলো সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করাটাই ভালো। কারণ, দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করলে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদ্ধতির প্রথম পর্যায় পরিচালনা করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশ বোর্ডে প্রদত্ত নোটিশ অনুযায়ী আবেদনকারীকে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে আসতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাছাইকৃত প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হলে তাদের তথ্যাদি ও আবেদনপত্রের সকল কাগজপত্র বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়। এই প্রথম পর্যায়টা পার হতে আপনার “বিশেষ মামা-চাচার” দরকার হবে। সেখানে বড় অংকের স্পিডমানি লাগবে, এটাই বাস্তব।
কিন্তু আপনি যদি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন তাহলে এই ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হবেনা ইনশাআল্লাহ।সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে সকল কাগজপত্র ডাক কিংবা কুরিয়ার যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি এরপর সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে পরবর্তী ধাপে কেজিএসপি-র পরীক্ষণ কমিটির কাছে সুপারিশ করবে এবং পরীক্ষণ কমিটির শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কাইপে অথবা জুমে তার পরীক্ষা গ্রহণ করবে।
আপনি যদি স্কলারশীপ পেয়ে যান তাহলে কোরিয়া সরকার আপনাকে কোরিয়া যাওয়া এবং বৃত্তি শেষে ফিরে আসার জন্য আসার বিমান খরচ, টিউশন ফি ব্যতীত মাসিক ৮ লক্ষ কোরিয়ান উওন (বাংলাদেশি প্রায় ৬০ হাজার টাকা), সকল প্রকার চিকিৎসা খরচ (মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স)। বহন করবে।
সাউথ কোরিয়াতে মাস্টার্স অথবা পিএইচডি সম্পন্ন করার পরে আপনি যদি চার মিলিয়ন কোরিয়ান ওনের জব পেয়ে যান তাহলে আপনি এখানের সিটিজেনের আবেদন করতে পারবেন। সাথে যদি কোরিয়ান ভাষার টপিক লেভেল ৫ থাকে তাহলে সিটিজেনশিপ পাওয়ার দৌড়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন। কোরিয়ার পাসপোর্ট বিশ্বের ২য় শক্তিশালী পাসপোর্ট। কোরিয়া সরকার আরও একটা চমৎকার সুযোগ করে দিচ্ছে প্রবাসীদের যা আগে ছিলোনা। সেটা হলো এই দেশে যদি কোন বিদেশীর সন্তানের জন্ম হয় তাহলে তাকে এই দেশের সিটিজেনশীপ দেয়া হবে। বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবনা মন্ত্রীসভায় পাশের জন্য জমা দেয়া হয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে পাশ হয়ে গেজেট আকারে বের হয়ে যাবে।
কোরিয়ানদের বেশিরভাগ কোন ধর্ম পালন করেনা। তবে কেউ ধর্ম পালন করতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়না। কোরিয়াতে প্রায় ২৬ টার মতো মসজিদ আছে। কোরিয়াতে প্রচুর হালাল খাবার পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর পরিমানে হালাল খাদ্য কোরিয়াতে রপ্তানি করা হয়।
কেজিএসপি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাইলে ভিজিট করুন www.studyinkorea.co.kr
জাকারীয়া খালিদ
গুমি, সাউথ কোরিয়া।