এম কে আনোয়ারের প্রতি রাজনীতিবিদদের শেষ শ্রদ্ধা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের জানাজা শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় কাঁটাবন মসজিদে প্রথম, দুপুর ১২টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে দ্বিতীয় ও দুপুর ১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাড়াও সরকারদলীয় রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। এর আগে, সোমবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকালেই বিএনপি কার্যালয়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কার্যালয়ের নিচতলায় কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। আগত নেতাকর্মীদের সবাই কালো ব্যাচ ধারণ করেন।
সকাল ১০টার আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চলে আসেন নয়া পল্টনে। এর আগে তিনি এলিফ্যান্ট রোডে সদ্যপ্রয়াত এম কে আনোয়ারের বাসায় গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। মির্জা ফখরুলের পর একে একে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আসতে থাকেন নয়া পল্টনের কার্যালয়ে। এছাড়া, এম কে আনোয়ারের নির্বাচনি আসন কুমিল্লা জেলার হোমনা, তিতাস এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরাও আসেন তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কাঁটাবন মসজিদে প্রথম জানাজার পর এম কে আনোয়ারের মরদেহ বিএনপি কার্যালয়ে পৌঁছায় দুপুর ১২টার দিকে। এসময় বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলীয় পতাকা দিয়ে কফিন ঢেকে দেন। তার দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে কফিনে ফুল দিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা।
জানাজার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকারের কারানির্যাতনসহ কোনও ধরনের নিপীড়নেও এম কে আনোয়ার কখনও পিছু হটেননি। তিনি গণতন্ত্রের যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন, সেই আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্যে সবসময় সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি সামনে থেকে জনগনকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা একজন সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদকে হারিয়েছি। তার এই অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়। দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ, তারা যেন এম কে আনোয়ারের জন্য দোয়া করেন।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ একজন সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান এবং রাজনীতিতে একজন ভদ্রলোককে হারিয়েছে।’

নয়া পল্টনের জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে আরও অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান; ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, আবদুল হালিম, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল কাইয়ুম, শাহজাদা মিয়া; প্রয়াত নেতার বড় ছেলে মাহমুদ আনোয়ারসহ দলে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এম কে আনোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে এম কে আনোয়ারের মরদেহ নেওয়া জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে তার তৃতীয় জানাজায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ। জানাজা শেষে এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে শোক জানান অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী। তারা বলেন, এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে দেশ একজন সৎ রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে।

এদিকে, দলের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, এম কে আনোয়ারের জানাজার পর মরদেহ রাখা হবে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে। আগামীকাল (বুধবার) তার দাফন হতে পারে।
দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার এম কে আনোয়ারের বাসায় যেতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এর আগে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, সোমবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় বার্ধক্যজনিত কারণে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।-বাংলা ট্রিবিউন।