প্রভাবহীন বলছে ক্ষমতাসীন দল যা ভাবছে বিএনপি

উপজেলা নির্বাচন

ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক::৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনেই আর অংশ নেয়ার আগ্রহ পাচ্ছে না বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড মনে করছে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘অর্থহীন’ নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া। দলটির তৃণমূলও ‘একচেটিয়া’ ফলাফলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিপক্ষে। জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত। তবে জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সাথে বৈঠক করে এ ব্যাপারে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের পর ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার।উপজেলা নির্বাচন প্রভাবহীন বলছে ক্ষমতাসীন দল । উপজেলা নির্বাচনে কী হবে সেটাতো বুঝাই যায়। তাহলে সে নির্বাচনে অংশ নিলেই কী আর না নিলেই কী।’

জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের কেউ কেউ স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পক্ষে। দুই-একজন নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশও করেছেন। তাদের যুক্তি- দেশ-বিদেশের কাছে প্রমাণিত হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর এই দেশে প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত। তবে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা শুধু উপজেলা নির্বাচনই নয়, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই যাওয়ার পক্ষে না। তাদের এই মতের পক্ষে একাধিক যুক্তিও রয়েছে।

 লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমি এই সরকার বা নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলা কেন কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জোটগতভাবে আমি এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পক্ষে নই। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে প্রহসনের অংশ হওয়া। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে উপজেলাসহ স্থানীয় সব নির্বাচনে নাগরিক ব্যানারে বা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের পক্ষে। আলাপকালে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, কল্যাণ পার্টি জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী। তবে ৩০ ডিসেম্বরের মতো নির্বাচন হলে সেই ধরনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো লাভ নেই।

বিএনপি নেতারা আলাপকালে জানান, পাঁচ বছর আগে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি জোট। তখন তাদের প্রত্যাশার কাছাকাছি প্রাপ্তিও ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ফলে যে হতাশা জমেছিল ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা কেটে যায়। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিও নেয় তারা। কিন্তু বিজয়ী বেশির ভাগ প্রতিনিধিই নিজ চেয়ারে বসতে পারেননি। উল্টো মামলা-জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে হিসাব-নিকাশে নেমেছে দলটি। মতামত নিচ্ছে জোট শরিকদেরও। গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়েছে। তাতে আলোচনা হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে। একাধিক সদস্য আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে রেখে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা-মামলা দিয়ে হতাশাগ্রস্ত করছে। আর্থিক ক্ষতির অঙ্কটাও অনেক। বিভিন্ন দিক বিচার করে তাই নির্বাচনে না যাওয়াই উচিত হবে। তারপরও ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতামত নেয়ার পরামর্শ আসে সভা থেকে।