ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্কঃ আবারও এক বছর পর করোনা মোকাবিলায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারক। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে দেশজুড়ে আজ (সোমবার) সকাল ছয়টা থেকে এক সপ্তাহের জন্য শুরু হচ্ছে লকডাউন (অবরুদ্ধ অবস্থা)।
এ সময় গণপরিবহন থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ পথে উড়বে না উড়োজাহাজও। মানুষের দৈনন্দিন কাজে ও চলাচলে থাকছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। জরুরি ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ থাকবে।
তবে জরুরি কাজের জন্য সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকছে। খোলা রাখার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ব্যবস্থায় কর্মীদের আনা-নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই শর্তে শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চালু রাখা যাবে। এ রকম নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে গতকাল রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অবশ্য প্রজ্ঞাপনে লকডাউন (অবরুদ্ধ অবস্থা) শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। যদিও গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটির এই সাত দিনকে ‘লকডাউন’ বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে ১১টি নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল সহ নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
- এ সময় সব ধরনের গণপরিবহন (সড়ক, রেল, নৌ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদনব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
- প্রজ্ঞাপনে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি সেবা যেমন ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস ও তাদের কর্মচারী এবং যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
- সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজের জন্য সীমিত সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শ্রমিকদের জন্য শিল্পকারখানা এলাকায় ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।সশস্ত্র বাহিনী বিভাগও ঢাকায় সুবিধাজনক জায়গায় ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- সন্ধ্যা ০৬টা থেকে সকাল ০৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি কাজ যেমন- ওষুধ কেনা, নিত্যপণ্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।
- খাবারের দোকান ও হোটেল–রেস্তোরাঁয় শুধু খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না।
- শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীর যেতে পারবেন না।
- সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।
- বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চলবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা দুইটা পর্যন্ত। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
- লকডাউনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে পরিচালিত হবে। জামিনসহ সব ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের কার্যকারিতা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বৃদ্ধি বলে গণ্য হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে। এ ছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম সীমিতভাবে চলবে। আর এই সময়ে অন্যান্য নিম্ন আদালতের কার্যক্রম না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।