টিভি পর্দার পরিচিত মুখ তরুণ অভিনেতা মনোজ কুমার প্রামাণিক। সম্প্রতি সময়ে নাটকে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন সবার, হয়েছেন প্রশংসিতও। অভিনয় আর শিক্ষকতা একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের এই প্রভাষক।
সম্প্রতি ফেসবুকে অভিনয় ও শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান তিনি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাপারে অফিসিয়াল কোনো পদত্যাগপত্র তাদের কাছে যায়নি!
“আমি চাকুরী ছেরে দিয়েছি এবং আমি আর কোন দিন শুটিং করব না সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকে রাতে সারাজীবনের জন্য রাধানগরে আমার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছি আর কোন দিন ফিরব না। আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ বাবা মায়ের আমাকে দরকার। আমি আর কিচ্ছু চাই না।”মনোজের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হঠাৎ অভিনয় ও শিক্ষকতা ছেড়ে দেয়ার কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি জানিয়েছিলেন, আমি মনে করি এখন আমার বাবা-মার কাছে থাকা বেশি প্রয়োজন। আমাকেও তাদের বেশি প্রয়োজন। তাই বাবা মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি।
অন্যদিকে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনোজ কুমারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদত্যাগপত্র তাদের কাছে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদি ড. হুমায়ুন কবীর জানান, স্ট্যাটাসটি সম্পর্কে জেনেছি তবে তিনি প্রশাসনিকভাবে আমাদের কাছে চাকরী ছাড়ার কোন ধরনের পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
মনোজ কুমার প্রামাণিকের বিভাগের এক সহকর্মী জানান, তাকে বেশ কিছুদিন যাবত মনে হচ্ছিল কোন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা প্রত্যাশা করবো নিজেকে গুছিয়ে তিনি দ্রুত সময়ে মিডিয়া ও শিক্ষকতায় ফিরে আসবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুরুষ সহকর্মী মনোজের ব্যাপারে জানান,’আমাদের সম্পর্কটা কেবলই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করার কারনে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আন্তরিক।গত ছয় মাস ধরে মনোজের সাথে আমাদের দুজনেরই ব্যস্ততা বেড়ে যাবার কারনে যোগাযোগ নিয়মিত হচ্ছে না।তবে তার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমি ফেইসবুকে তার ওই পোস্টের বাইরে কিছু জানিনা’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক নারী সহকর্মী মানসিক অসুস্থতাজনিত কারনে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান,তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরী গত বছর ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কারোর সাথেই যোগাযোগ রাখেননি।
মনোজের সাথে তার বন্ধুত্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান,বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীরত অবস্থায় সহকর্মী হিসেবে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে যেমন আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এটা ঠিক তেমনি।বন্ধুত্বের কারনে মনোজ কুমার গত বছর তাকে জানান ফারহানা হামিদ আত্তি নামে এক মডেলের
সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এবং তিনি এও জানান, আত্তি বেশ কদিন আগে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।তবে ঠিক কি কারনে,কার জন্য সেটা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।তবে এই সহকর্মীর কথায় ছিলো কান্নাজড়িত অভিমানের সুর।
মনোজের চাকরী ছেড়ে দেবার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে তিনি জানান,’আমার মনে হয় তার বড় কোন অপরাধবোধ আছে যার কারনে তিনি খোলা আকাশের নিচে থাকার যোগ্যই না।সে অপরাধবোধ থেকে বাঁচার জন্যই মনে হয় তিনি সবকিছু ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
মনোজের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বলছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় এমন সিদ্ধান্ত আবার কেউ মনে করছেন এটি বাড়তি মিডিয়া কভারেজের একটি কৌশল মাত্র।তবে সকলেই ফেসবুকে দেয়া মনোজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মিডিয়া ও শিক্ষকতায় ফিরে আসার প্রত্যাশা করছেন।
মনোজ কুমার ২০০৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় আসেন মনোজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থিসিসের একটা সূত্র ধরে নির্মাতা অমিতাভ রেজার সঙ্গে পরিচয় তার। সে সূত্র ধরেই তার সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। এটাই আসলে তার শোবিজে ক্যারিয়ার গড়ার ভিতটা গড়ে দেয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তার কর্মপরিধি বাড়তে থাকে।
উল্লেখ্য, মনোজ কুমার প্রামাণিক ২০০৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে মিডিয়া জীবন শুরু করেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে যুক্ত হয়েছেন নিয়মিত অভিনয়ে। মনোজ অভিনীত আলোচিত নাটকের মধ্যে অন্যতম ‘ফুল ফোটানোর খেলা’ ও ‘কথা হবে তো?’। টিভি পর্দায় বিজ্ঞাপন ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতেও মনোজের উপস্থিতি চোখে পড়ে। তিনি অভিনয় করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘স্যাটারডে আফটারনুন’ চলচ্চিত্র ও অমনিবাস ছবি ‘ইতি তোমারই ঢাকা’য়। অভিনেতা নাম লিখিয়েছেন নির্মাতা নূরুল আলম আতিকের নতুন ছবি মানুষের বাগানেও।