উপপরিচালক জাকির এর কাছে জিম্মি মাদ্রাসা অধিদপ্তর-পর্ব-২

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ মাদ্রাসা অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসেনের ক্ষমতার দাপট আর স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ দেশের মাদ্রাসা শিক্ষকরা।এমন অভিযোগ অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের। সুত্র জানিয়েছে- উপপরিচালক জাকির হোসাইন এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি চক্রের নিয়মেই চলে অধিদপ্তরের সকল কার্যক্রম।

সুত্র মতে- বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের ৭৯৫৪ টি এমপিও ভূক্ত মাদরাসায় ১,৫০,৮০০ জন শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ১৫১৯ টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ৪,৫২৯ জন শিক্ষকদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক বিষয়ে মনিটরিং এর সার্বিক দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধদিপ্তরের। এ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অধিক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদশ। এমপওি ভূক্তকরণ, শিক্ষক এমপিও ভূক্তকরণসহ মাদ্রাসা শিক্ষার একাডেমিক এবং কাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে পরার্মশ দেয়া এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করাই অধিদপ্তরের প্রধান কাজ। তবে  এসব সেবায় বর্তমানে অস্বস্তি নেমে এসেছে। শুধু নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্তের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত অধিদপ্তরটি। আটকে আছে নিয়োগ ছাড়া অন্যান্য ফাইলগুলো।  মাদ্রাসাগুলোর এমপিও ভূক্তকরণ, শিক্ষক এমপিও ভূক্তকরণসহ মাদ্রাসা শিক্ষার একাডেমিক এবং কাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। নিয়োগ নিয়ে কাজ করছে উপপরিচালক জাকির হোসাইন এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের সিন্ডিকেট দলটি। আর নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে একাই অধিক সংখ্যাক মাদ্রাসায় নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হয়ে বসে আছেন উপপরিচালক জাকির হোসাইন ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম। দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব মাদ্রাসা গুলোর নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত জাকির ও আবু নঈম।  সুত্র জানায়- আবু নঈম একজন বিএনপি-জামাতপন্থী ব্যক্তি,যেকারণে তার ও তার ভাইয়ের কোন প্রমোশন হয়নি। যেসব মাদ্রাসায় একাধিক পদে নিয়োগ হয় সেখানেই ডিজির প্রতিনিধি হন এই দুজন। যেকারণে দেশের অন্যান্য  মাদ্রাসা গুলোর পদ শুন্য হলেও জাকির ও দুই সঙ্গীর সময়ের অভাবে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। তাদেরকে ছাড়া অধিদপ্তরের আরো প্রায় ২০জন কর্মকর্তা ডিজির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও তাদের তেমনভাবে সুষম-বন্ঠনে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছেনা, বর্তমান মহাপরিচালক জাকিরের কাছে জিম্মি বিধায় অধিক সংখ্যাক ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ পত্র পাচ্ছেন জাকির ও আবু নঈম।  আর সময়ের অভাবে এসব নিয়োগ সম্পন্ন করতে না পারায় অনেক  প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে  কিন্তু তারা নিয়োগ দিতে পারছেনা।

সুত্র জানিয়েছে- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন উপমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে মহাপরিচালক সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বদলী আর বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে সে তার মনগড়া মতই কার্যক্রম চালালেও প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। ৩সদস্যের এই সিন্ডিকেটরা শুধু নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি নিতে ব্যস্ত। যে কারণে অন্যান্য সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে- স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) এর  তেলাওয়াত হোসাইন নামে কেন্দ্রীয় একজন শিক্ষক নেতাকে চাপাইনবয়াবগঞ্জের একটা প্রতিষ্ঠানে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে  নিয়োগ দিলেও উক্ত  নিয়োগের ডিজির  প্রতিনিধি পত্রটি বদলানো হয়েছে জাকিরের কথায়। অথচ তেলাওয়াত হোসেন  একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি থাকার পরও তার ডিজির প্রতিনিধিত্ব বাতিল করতে ডাক ফাইলে উঠান উপপরিচালক জাকির হোসাইন। অবশেষে তেলাওয়াতের নামে ইস্যু করা সেই পত্রটি বাতিল করে লুৎফর রহমান নামের এক সহকারী পরিচালককে দেওয়া হয়। তেলাওয়াত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ স্বাশিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

সুত্র জানিয়েছে – একটা কামিল,ফাজিল,আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগেও ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে যাচ্ছেন জাকির হোসাইন,পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ আবু নঈম,সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান। যেখানে এই তিন সিন্ডিকেট সদস্য  নিজেই কোরআন, হাদিস ও আরবী বিষয়ে তারা মোটেই কিছু জানে না সেখানে একটা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগে জাকির কিভাবে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন। এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

সুত্রটি আরো জানায়- অধিদপ্তরের  যেকোন ডাক- ফাইলে যেখানে ডিজির একা সাক্ষরে চলার কথা,সেখানে  প্রতিটি  ডাক ফাইলে স্বাক্ষর হয় ৩জনের। তিন সদস্যের এই সিন্ডিকেটদের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি না দিতে পারায় নিয়োগ পক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

সুত্র জানান- শিক্ষা অধিদপ্তরে জাকিরের অনিয়ম,প্রভাব আর স্বেচ্ছাচারীতার কারণে আটকে আছে দেশের মাদ্রাসার বেতন ভাতা সংশোধনী,এমপিও সংশোধন, টাইম স্কেল, বিভিন্ন তদন্ত কার্যক্রম, গভর্ণিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির ডিজির প্রতিনিধি  সদস্য নিয়োগ চিঠির ফাইল।  জানা গেছে-পুর্বে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক  যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন সকলের স্বমন্বয়ে ডিজির প্রতিনিধি দেওয়া হতো  বিধায় সুন্দর ভাবে চলছিলো অধিদপ্তরের কার্যক্রম। যার কোন বদনাম ছিলো না।  যদিও এ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অধিক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদশ।

অভিযোগ উঠেছে- জাকির সহ এই তিনজন নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হওয়ায় দেশের মাদ্রাসাগুলোতে জামাত পন্থীরা নিয়োগ পাচ্ছেন আর এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষিত বেকাররা। সারা দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এভাবেই চলছে নিয়োগ। এসব নিয়োগে মোটা অংকের অর্থ কন্ট্রাক্ট করা হয়ে থাকে বলেও অভিযোগে রয়েছে।

শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে- যেহেতু উপপরিচালক জাকির হোসাইন সহ তাদের ৩ সদস্য বিশিষ্ট সিন্ডিকেট চক্রটি বিএনপি জামাত পন্থী, তাই এই তিন সদস্যের সিন্ডিকেটরা নিয়োগ বোর্ডের সদস্য থাকলে বিএনপি জামাতের আশীর্বাদপৃষ্টরা নিয়োগ পাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বিষয়টা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিবেচনা করারও দাবী জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে- যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো  জামাতের পরিচালনায় চলছে জাকির হোসাইন সেগুলোতে অতি গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেন।এরই মাঝে তিনি -জামাত কর্তৃক পরিচালিত মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তামিরুল মিল্লাত,পুরুষ শাখা ও তামিরুল মিল্লাত (মহিলা শাখা) আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। যে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব হিসাবে দায়িত্বে  ছিলেন  প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন। যিনি জামাতের শুরা সদস্য,একজন জামায়াত নেতা। এছাড়াও তিনি জামাত দ্বারা পরিচালিত  মিরপুরস্থ মোহাম্মদীয়া আলিম মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রোগ্রামগুলোতে নিয়মিতই উপস্থিত হন বলেও জানা গেছে।  অথচ দেশে এত এত প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলোতে অনুষ্ঠানে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি এমনও তথ্য রয়েছে।